GAJINAGAR PREMIER LEAGUE

 

গাজীনগর প্রিমিয়ার লিগ (GPL): মুর্শিদাবাদের গর্ব

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান শহরের গাজীনগর অঞ্চলে শুরু হওয়া গাজীনগর প্রিমিয়ার লিগ (GPL) আজ মুর্শিদাবাদের সবচেয়ে বড় শর্টহ্যান্ড ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হিসেবে পরিচিত। এটি শুধুমাত্র একটি খেলার প্রতিযোগিতা নয়, বরং একটি উদ্দীপনার কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে স্থানীয় প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা আইপিএলের ধাঁচে নিলামের মাধ্যমে দলভুক্ত হয়ে নিজের প্রতিভার প্রদর্শন করেন।

আমাদের এই অসাধারণ যাত্রার শুরু হয় ২০২৩ সালে। প্রথম থেকেই আমরা লক্ষ্য নিয়েছিলাম মুর্শিদাবাদের ক্রিকেটপ্রেমী যুবকদের জন্য একটি পেশাদার মঞ্চ গড়ে তোলা, যেখানে তারা নিজের প্রতিভা তুলে ধরতে পারবে এবং ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রাণিত হবে। এই মহতী উদ্যোগের পেছনে অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে মূল ভরসা ছিল আরপি জুয়েলার্স, যার কর্ণধার এবং GPL-এর প্রেসিডেন্ট কাদির শেখ। তার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন MH মেডিকেল এজেন্সি-র কর্ণধার সোয়েব আনসারী

প্রথম সিজন (২০২৩): পথচলার সূচনা

প্রথম সিজনে ব্যাপক উৎসাহ এবং উন্মাদনার মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়। দলগুলো আইপিএলের স্টাইল অনুসরণ করে নিলামের মাধ্যমে খেলোয়াড় সংগ্রহ করে। সেই সিজনে চ্যাম্পিয়ন হয় এলএসজি (লাখনৌ সুপার জায়েন্টস)। এই দলের ওয়ার্নার ছিলেন রুবেল শেখ, যিনি দক্ষ নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে তার দলকে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব এনে দেন।

ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হন বিকি ঘোষ, যিনি মালদার কালিয়াচক এলাকার বাসিন্দা। তার ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং ধারাবাহিকতা প্রথম সিজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল।

দ্বিতীয় সিজন: আরও বিস্তৃত, আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক

দ্বিতীয় সিজনে GPL পৌঁছে যায় আরও নতুন উচ্চতায়। এই সিজনে চ্যাম্পিয়ন হয় টিম অনলি ওয়ান, যার মালিক ছিলেন আব্দুর রহিম ও অধিনায়ক ছিলেন কাদির শেখ। তার সংগঠিত দল এবং কৌশলী পরিচালনার ফলে তারা সিজনের শিরোপা নিজেদের করে নেয়।

এই সিজনের ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হন উমার ফারুক, সাহেবগঞ্জ জেলার প্রতিভাবান এক ক্রিকেটার, যিনি টুর্নামেন্ট জুড়ে ব্যাটিং অসাধারণ পারফর্ম করে সকলের নজর কেড়ে নেন।

টুর্নামেন্ট কমিটি ও সংগঠন

GPL-এর পেছনে রয়েছে এক সুসংগঠিত ও নিবেদিত পরিচালনাকারী দল। প্রেসিডেন্ট কাদির শেখ, সেক্রেটারি হাজীকুল ইসলাম, এবং সহ-প্রেসিডেন্ট আকবারুল হক এর নেতৃত্বে টুর্নামেন্টের প্রতিটি পর্ব সুচারুভাবে পরিচালিত হয়েছে। তারা প্রত্যেকে একে শুধু একটি টুর্নামেন্ট হিসেবে নয়, বরং সমাজ গঠনের একটি মাধ্যম হিসেবেই দেখেছেন।

স্পন্সরশিপ ও সহযোগিতা

টুর্নামেন্টের পুরো খরচ ও স্পন্সরশিপের দায়িত্ব নিয়েছে আরপি জুয়েলার্স এবং MH মেডিকেল এজেন্সি। আরপি জুয়েলার্স-এর কর্ণধার কাদির শেখ ও MH মেডিকেল এজেন্সির কর্ণধার সোয়েব আনসারীর আর্থিক ও মানসিক সহায়তা ছাড়া এই উদ্যোগ এতদূর সম্ভব হতো না। তারা দু’জনই খেলাধুলা ও যুব উন্নয়নে বিশ্বাসী এবং তাদের অবদানে আজ GPL একটি পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে।

সমাপ্তি ও ভবিষ্যতের দিশা

GPL শুধুমাত্র ধুলিয়ান নয়, গোটা মুর্শিদাবাদের ক্রীড়া মানচিত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এখান থেকে উঠে আসছে নতুন প্রতিভা, তৈরি হচ্ছে নেতৃত্বের উদাহরণ, আর গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষও পাচ্ছে আনন্দ, গর্ব এবং অনুপ্রেরণা।

আমরা বিশ্বাস করি, আগামী দিনগুলোতে GPL শুধু ধুলিয়ানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—বরং রাজ্য বা জাতীয় স্তরেও এই প্রতিযোগিতা একদিন আলো ছড়াবে। কারণ GPL মানে শুধু ক্রিকেট নয়—GPL মানে হল গর্ব, প্রতিভা এবং নেতৃত্বের প্রতীক।

Leave a Comment